আজ শুক্রবার, ১৯শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৬ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

করোনায় প্রথম সারিতে থেকেও কানাকড়িও জুটেনি উইমেন্স মেডিকেলের ১৮ নার্সের

সিলেটের বার্তা ডেস্ক
প্রকাশিত ফেব্রুয়ারি ১১, ২০২১, ০১:০৫ অপরাহ্ণ
করোনায় প্রথম সারিতে থেকেও কানাকড়িও জুটেনি উইমেন্স মেডিকেলের ১৮ নার্সের
শেয়ার করুন/Share it

মহামারী করোনা ভাইরাসের প্রার্দূভাবের শুরুর পরপরই চিকিৎসকরা নিজনিজ গাড়ী কিংবা মেডিকেলের নির্ধারিত গাড়ী করে আসতেন। চেম্বার করতে। নাম কা ওয়াস্তে হাজিরা দিয়ে টুঁ মেরে চলে যেতেন।

কড়া লকডাউনের সময় চিকিৎসকদের অনেকই তো ২/১ ঘন্টার জন্য আসতেন মাত্র।

প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাসের সময় নিজের জীবনের পরওয়া না করে এমনকি রমজান মাসে সিয়াম-সাধনা পালন করেই তারা প্রথম সারিতে থেকে রোগীর সেবা দিয়ে গেছেন সিলেট উইমেন্স মেডিকেলে।

অথচ সেই কঠোর পরিশ্রমের বিনিময়ে ন্যায্য পাওনা এক মাসের বেতন ও অর্জিত ছুটির ভাতা থেকে তারা বঞ্চিত। নানা বাহানায় তাদের অন্তত ৫ থেকে ৬ লাখ টাকা ন্যায্য পাওনা থেকে বঞ্চিত রেখেছেন সিলেট উইমেন্স মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ- এমনই অভিযোগ ১৮ জন নার্সের।

এই সেবক-সেবিকারা ন্যায্য পাওনা আদায় করতে মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর কাছেও গিয়েছিলেন। আশ্বাস মিললেও এখনো কানাকড়িও জুটেনি তাদের ভাগ্যে। বর্তমানে আন্দোলনের জন্য সংগঠিত হচ্ছেন বলে জানিয়েছেন তারা।

জানা যায়, সিলেট উইমেন্স মেডিকেল কলেজ হাসাপাতালে কর্মরত অবস্থায় ২০২০ সালের মে মাসে ২০ জন নারী ও পুরুষ নার্সের সরকারি চাকরি হয়। কোভিড-১৯ মোকাবেলায় বিশেষ নিয়োগ হয় তাদের। দ্রুত কাজে যোগদানের বাধ্যবধকতাও ছিল। এ অবস্থায় পদত্যাগ করে সরকারি চাকরিতে যোগদান করলে তারা উইমেন্স থেকে এপ্রিল মাসের বেতন ও ভাতা পাবেন কিনা এ নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্বে ভুগছিলেন। তখন তখন উইমেন্সের উর্ধ্বতন কর্তারা যথাসময়ে তাদের যাবতিয় পাওনা পরিশোধে আশ^াস দিলে মোট ২০ জন নার্স ১৩ মে’র মধ্যে বিভিন্ন তারিখে পদত্যাগ করেন।

পদত্যাগ করে তারা নিজেদের কর্মস্থলে যোগদান করেন আর অপেক্ষায় থাকেন সুখবরের। কিন্তু তা আর হয়নি। অপেক্ষার প্রহর গুনতে গুনতে একসময় তাদের পক্ষে কয়েকজন নার্স পাওনা আদায়ের জন্য ব্যবস্থাপনা পরিচালকের কাছে লিখিত আবেদন করেন। তারা হলেন তৃপ্তি রাণী দাস, রেসমা বেগম ও শামীমা আক্তার। কিন্তু কোন শান্তনা বা সদুত্তর পান নি তারা।

আরও পড়ুন:  সেদিন সত্য-মিথ্যার পার্থক্য উদ্ভাসিত হয়ে উঠেছিলো: আল্লামা গাছবাড়ী

এ প্রসঙ্গে তৃপ্তি রাণী বলেন, ‘কোন সদুত্তর না পেয়ে আমরা ডাক্তার আজির উদ্দিনের সাথে দেখা করি। হাসপাতালের মালিকপক্ষের একজন হিসাবে তাকে আমাদের দুরবস্থার কথা জানাই। তিনি আমাদের কথায় কোন পাত্তাই দেননি। উল্টো এ ব্যাপারে কথা বলতে হাসপাতালে প্রবেশেও নিষেধ করেছেন।’ এ অবস্থায় হতাশ হয়ে সম্মুখসারির এই করোনাযোদ্ধারা সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর সাথে দেখা করে বিষয়টি অবগত করেন।

তারা তার হস্তক্ষেপও কামনা করেন। মেয়র তাৎক্ষনিক কথা বলেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সাথে। পরে নার্সদের জানান, তাদের হাসপাতালের আর্থিক অবস্থা ভালো হলে টাকা দেয়া হবে। তবে আইনগতভাবে তারা এ টাকা পাননা। এরপর প্রায় ৭ মাস কেটে গেছে। বঞ্চিত আছেন এই সম্মুখসারির যোদ্ধারা।

এ প্রসঙ্গে নার্সদের পক্ষ থেকে এনামুুল কবির, তৃপ্তি রাণী ও শামীমা আক্তার জানান, একই সময়ে ইবনেসিনা, রাগীব-রাবেয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও নর্থইস্ট থেকে যাদের সরকারি চাকরি হয়েছে, তাদের বেতন-ভাতা ৩ মাসের মধ্যেই প্রদান করা হয়েছে।

এরমধ্যে ইবনেসিনা ও রাগিব-রাবেয়া থেকে সাথে সাথেই পাওনা পরিশোধ করা হয়েছে। বঞ্চিত নার্সদের প্রশ্ন, যখন করোনার ভয়ে ডাক্তাররাও হাসপাতালে নিয়মিত ছিলেন না তখন তারা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে, ১২/১৩ ঘন্টা কাজের পরও তারা বঞ্চিত থাকবেন কেন? তাছাড়া দেশ ও জাতির প্রয়োজনে সরকারইতো তাদের ডেকে নিয়েছেন। তারা যদি বেসরকারি কোন প্রতিষ্ঠানে চাকরি নিতেন তাহলে চাকরিবিধির প্রশ্ন উঠতো এবং মানা যেতো। কিন্তু তারাতো দেশের প্রয়োজনে, সরকারের প্রয়োজনে কর্তৃপক্ষের আশ^াসের ভিত্তিতে চাকরি ছেড়েছিলেন।

তাহলে তাদের কষ্টার্জিত পারিশ্রমিক দেয়া হবেনা কেন? এ ব্যাপারে তারা আবারও মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী, সিলেটের জেলা প্রশাসক এম কাজী এমদাদুল ইসলাম, স্বাস্থ্য অধিদফতরের সিলেট বিভাগীয় পরিচালক ডা. সুলতানা রাজিয়া ও সিলেটের সিভিল সার্জন ডাক্তার প্রেমানন্দ মন্ডলের হস্তক্ষেপ চাইছেন।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে সিসিক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, ‘নার্সরা আমার কাছে এসেছিলেন। হাসাপতালের পরিচালকের সাথে আমার আলাপও হয়েছিল। তিনি আইনগতভাবে তারা পাবেন না বলে জানিয়েছিলেন। তবে মানবিক দিক বিবেচনা করে হাসপাতালের আর্থিক অবস্থা ভালো হলে তাদের বেতনভাতা পরিশোধের আশ^াস দেয়া হয়েছিল।’

আরও পড়ুন:  হবিগঞ্জে উঠানামা করছে আলুর দাম

বিষয়টি নিয়ে আলাপকালে সিলেট উইমেন্স মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডাক্তার হাসান ফেরদৌস বলেন, ‘আইনগতভাবে তারা এটা পাননা। কমপক্ষে ২ মাস আগে পদত্যাগ করলে তারা নিয়মিত বেতন-ভাতাটা পেতেন।’ আরও বিস্তারিত জানতে চাইলে তিনি তার হাসপাতালে যাওয়ার আমন্ত্রণ জানান। মঙ্গলবার দুপুরে সেখানে গেলে তাকে পাওয়া যায়নি। জানানো হয়-তিনি জরুরী মিটিংয়ে ব্যস্ত।

এ অবস্থায় কথা বলেন উপপরিচালক (অ্যাডমিন) ডা. হিমাংশু শেখর দাস।
তিনি বলেন, ‘হাসপাতালের আর্থিক ক্রাইসিস চলছিল তখন। এ অবস্থায় আমরাও বেতন-ভাতা নিয়েছি অর্ধেক। তাদেরকে বলা হয়েছিল, আইনগতভাবে তারা তা না পেলেও মানবিক দিক বিবেচনা করে, হাসপাতালের আর্থিক অবস্থা ভালো হলে তাদের টাকা পরিশোধ করা হবে। কিন্তু সে অবস্থা এখনো হয়নি।’

বঞ্চিতরা জানালেন, তাদের ২০ জনের মধ্যে দু’জন নার্সের বেতন যথাসময়ে দেওয়া হয়েছে। তাহলে অন্য ১৮ জনের দোষ কি? এমন প্রশ্নে তাদের মনে তোলপাড় চলছে। এবিষয়টিও অস্বীকার করেছেন উইমেন্স মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপপরিচালক ডা. হিমাংশু শেখর দাস।

সিলেটের বার্তা ডেস্ক


শেয়ার করুন/Share it
শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
 
১০১১১২
১৩১৪১৫১৬১৭১৮১৯
২০২১২২২৩২৪২৫২৬
২৭২৮২৯৩০