সিলেটের সীমান্তবর্তী এলাকা জৈন্তাপুরের আশপাশই ছিল ভূমিকম্পের উৎপত্তি স্থল। এমনটিই জানালেন সিলেটের আবহাওয়াবিদ আবু সাঈদ চৌধুরী।
তিনি জানান, দু’বার নয় একবারই রেকর্ড করা হয়েছে ভূমিকম্প।
আজ সোমবার (৭ জুন) সন্ধ্যা ৬টা ২৭ ও ২৯ মিনিটে দুই বার সিলেটে ভূমিকম্প হয়। তবে আবহাওয়া অধিদপ্তরের রেকর্ডে একবার ভূমিকম্পের কথা বলা হচ্ছে।
সিলেট আবহাওয়া অফিসের সিনিয়র আবহাওয়াবিদ সাঈদ আহমেদ চৌধুরী এতথ্য নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, আমাদের রেকর্ড অনুযায়ী সন্ধ্যা ৬টা মিনিট ৩১ সেকেন্ডে ভূমিকম্প হয়েছে। এর মাত্রা ছিলো ৩.৮। উৎপত্তিস্থল সিলেটের জৈন্তাপুর ও এর আশপাশ এলাকা।
এদিকে, সোমবার সন্ধ্যায় ভূমিকম্পের সময় নগরবাসীর মধ্যে তীব্র আতঙ্ক দেখা দেয়। বাসা ও অফিসে থাকা মানুষজন ঘর ছেড়ে বাইরে বেরিয়ে রাস্তায় ভিড় করেন। তবে তাৎক্ষণিকভাবে কোনো ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া যায়নি।
এর আগে সর্বশেষ গত ৩০ মে মৃদু ভূমিকম্প অনুভূত হয়। ওইদিন ভোর ৪টা ৩৫ মিনিট ৭ সেকেন্ডে দুই দশমিক ৮ মাত্রার ভূ-কম্পন অনুভূত হয়। তার আগের দিন অর্থাৎ ২৯ মে দেশের ইতিহাসে প্রথমবারের একদিনে চার দফা ভূ-কম্পন অনুভূত হয় সিলেটে। এর উৎপত্তিস্থল সিলেটের জৈন্তাপুর ও এর আশপাশে ছিল।
সিলেটে যেকোনো সময় বড় ধরনের ভূমিকম্পের শঙ্কা আগে থেকেই করছেন বিশেষজ্ঞরা। গত প্রায় ১৮ ঘণ্টায় ওই অঞ্চলে হওয়া ছোট ছোট ৫টির বেশি ভূকম্পন এ শঙ্কা আরও তীব্রতর করেছে।
বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদফতরের ভূকম্পন ইউনিটের ইনচার্জ ও ভূকম্পন বিশেষজ্ঞ মো. মমিনুল ইসলাম এ বিষয়ে বলেন, সিলেট অনেক আগে থেকেই ভূকম্পন এলাকা হিসেবে ঝূঁকিপূর্ণ।
তিনি বলেন, বড় ভূকম্পন হওয়ার আগে পরপর ছোট ছোট অনেক বেশি ভূকম্পন হয়ে থাকে। সিলেটে যে ছোট ছোট ভূকম্পন হয়েছে তার সময় ব্যবধান অনেক বেশি হয়ে গেছে। এ হিসেবে বড় ভূমিকম্পন হওয়ার সম্ভাবনা কিছুটা কমে গেছে। কেননা, যখন ছোট ছোট ভূমিকম্পন অল্প সময়ে অনেক বেশিবার হবে তখন বড় ভূকম্পন হওয়ার শঙ্কা বেশি থাকে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন- পৃথিবীর উপরিভাগের ৭০-১০০ কিলোমিটার পুরুত্বের লিথোস্ফিয়ার ছোট-বড় ১৩টি খণ্ডে (প্লেটে) বিভক্ত। উত্তপ্ত ও নরম এস্থোনোস্ফিয়ারের ওপর ভাসমান এ প্লেটগুলো গতিশীল।
প্লেটগুলো গতিশীল থাকায় ভূখণ্ড ধীরে ধীরে সরতে থাকে, যেটাকে ‘অ্যাকটিভ ফল্ট’ বা সক্রিয় চ্যুতি বলা হয়। প্লেটের স্থানচ্যুতির সময় জমে থাকা শক্তি বিপুল বেগে বের হয়, তখন সংযোগস্থলে ভূমিকম্প হয়।
বাংলাদেশের উত্তরে ইন্ডিয়ান প্লেট ও ইউরেশিয়ান প্লেটের সংযোগস্থল হলো পূর্বে বার্মিজ প্লেট ও ইন্ডিয়ান প্লেটের সংযোগস্থল। উত্তর-পূর্বাঞ্চলে সিলেটের ডাউকি অঞ্চলে রয়েছে এমন ফল্ট।
আর ‘সাবডাকশন জোন’ সমুদ্র তলদেশের এমন এলাকা যেখানে দুটি টেকটনিক প্লেট মুখোমুখি অবস্থানে থাকে এবং প্লেট দুটো পরস্পরের দিকে এগিয়ে আসতে থাকে। এমন অবস্থায় একটি টেকটনিক প্লেট আরেকটি নিচে চলে গেলে সৃষ্টি হয় ভূমিকম্প।
অতীত ইতিহাসের তথ্য অনুযায়ী- ১৯২২ সালে ৭.৬ মাত্রার ভূমিকম্প হয়েছিল হবিগঞ্জ অঞ্চলে; ১৯১৮ সালেও ৭.৫ মাত্রার হয়েছিল। চার বছরের ব্যবধানে বড় ভূমিকম্পন ছিল শত বছর আগে। এক মাস আগে ডাউকি ফল্টেরই উত্তর প্রান্তে আসাম সীমান্তে ৬ মাত্রার ভূমিকম্প হয়। তার মানে এ ‘ডাউকি ফল্ট খুব সক্রিয়’।
ডাউকি ফল্ট ও টেকনাফ সাবডাকশন জোনে হাজার বছর ধরে যে পরিমাণ শক্তি ক্রমান্বয়ে সঞ্চয় হয়ে আসছে, তাতে আট মাত্রার অধিক ভূমিকম্প সংগঠিত করতে পারে। এ শক্তি একবারেও বের হতে পারে; আবার পালাক্রমেও বের হতে পারে। আমাদের প্রস্তুতি নিয়ে রাখতে হবে।
সিলেট অঞ্চলে অতীতে তিনবার বড় ধরনের ভূমিকম্প হওয়ার ইতিহাস আছে। এর মধ্যে একটি হয়েছিল ১৮৬৯ সালে সিলেট অঞ্চলের কাছার এলাকায়। রিখটার স্কেলে এই কম্পনের মাত্রা ছিল ৭ দশমিক ৬। আরেকটি ১৯১৮ সালে শ্রীমঙ্গলে। আরেকটি ১৯২৩ সালে দুর্গাপুরে।