সিলেটের বার্তা ডেস্ক:: মহামারী করোনাভাইরাস প্রতিরোধে বিশ্ব সাস্থ্য সংস্থাকে দেয়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৫ দফা কৌশল অবলম্বনের মাধ্যমেই করোনা রোধের সম্ভাবনা দেখছেন দেশের বিশিষ্টজনরা।
তারা বলছেন, প্রধানমন্ত্রীর কৌশলগুলো যথাযথভাবে বাস্তবায়িত হলে করোনাযুদ্ধে জয়ী হওয়া সম্ভব। এসব কৌশল বাস্তবায়নে সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলোকে নজরদারি বাড়ানোরও পরামর্শ দিয়েছেন বিশিষ্টজনরা।
প্রসঙ্গত, গত শনিবার (২৫ এপ্রিল) বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) মহাপরিচালক ডা. টেড্রস অ্যাডহ্যানম জিব্রেইসাসকে লেখা এক চিঠিতে করোনা মোকাবিলায় ৫ কৌশলের কথা জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।
কৌশল হলো—১. নজরদারি ও পরীক্ষাগার সহায়তা, ২. যোগাযোগ সন্ধান করা ও দেশে প্রবেশকালে স্ক্রিনিং, ৩. আক্রান্তদের ব্যবস্থাপনা ও সংক্রমণ প্রতিরোধে নিয়ন্ত্রণ, ৪. ঝুঁকিপূর্ণ যোগাযোগ ও কমিউনিটির সম্পৃক্ততা এবং ৫. লজিস্টিকস ও সামগ্রী সংগ্রহের উদ্যোগ।
প্রধানমন্ত্রীর নেওয়া কৌশলগুলো করোনা মোকাবিলায় কার্যকর পদক্ষেপ বলে মন্তব্য করেছেন সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সভাপতি এম হাফিজ উদ্দিন খান। তিনি বলেন, ‘যারা বিভিন্ন ক্ষেত্রে দায়িত্ব পালন করছেন, তাদের উচিত সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে এসব কৌশল বাস্তবায়নে দ্রুত ও কার্যকরী পদক্ষেপ নেওয়া।’
এদিকে, প্রধানমন্ত্রীর কৌশলগুলোর সঠিকর বাস্তবায়নের দাবি জানিয়েছেন সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার। ‘এখন আমাদের বিশেষজ্ঞ জ্ঞান দরকার, বৈজ্ঞানিক জ্ঞান দরকার, অর্থনৈতিক জ্ঞান দরকার। আমরা এখন মহামারি পর্যায়ে রয়েছি। এখন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আগামী কয়েকসপ্তাহ আমাদের জন্য ভয়ানক সপ্তাহ। এখন সঠিক কৌশল সঠিক সিদ্ধান্ত আগে প্রয়োগ করা জরুরি।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পাবলিক হেলফ অ্যান্ড ইনফরমেটিকস বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. মো. আতিকুল হক বলেন, ‘আমাদের কিছু ক্ষেত্রে আরও সতর্ক হওয়া উচিত ছিল। কারণ আমরা লকডাউন করেছি, কিন্তু মানুষ ঘোরাফেরা করছে। এটাকে তো লকডাউন বলা যাচ্ছে না। প্রধানমন্ত্রী যেটা বলেছেন বিশ্বসাস্থ্য সংস্থাকে, তার শতভাগ বাস্তবায়ন করতে হবে।’
প্রধানমন্ত্রীর কৌশলগুলোর সঠিকভাবে বাস্তবায়িত হলে করোনা মোকাবিলায় বাংলাদেশ আরও এগিয়ে থাকতো বলে মন্তব্য করেছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘শুরুতেই বিদেশফেরতেদের কঠোর নজরদারিতে রাখা দরকার ছিল। তাদের প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে রাখা দরকার ছিল।’
বিদেশফেরতদের হোম কায়ারেন্টাইনে না রাখার পক্ষে যুক্তি তুলে ধরে লেলিন চৌধুরী বলেন, ‘আমাদের দেশের পরিস্থিতি সুইজারল্যান্ড বা ফিনল্যান্ডের মতো নয়। এখানে ১২ জনের পরিবার একটি বাথরুম ব্যবহার করে, একটি টিউবওয়েল বা পুকরে গোছল করে। তাদের থেকেই এখন সারাদেশে করোনা ছড়িয়ে পড়ে ব্যাপকভাবে।’
বর্তমান প্রেক্ষাপরে আরও বেশি নমুনা পরীক্ষার করা প্রয়োজন বলে মনে করেন লেলিন চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘প্রথম দিকে বলা হলো যথেষ্ট পরীক্ষা সামগ্রী আছে। কিন্তু বাস্তবে দেখা গেলো যত ল্যাব আছে, তার সবজায়গায় পরীক্ষা হচ্ছে না। কারণ, দক্ষ জনশক্তির অভাব।’ তিনি বলেন, ‘আবার যত নমুনা সংগ্রহ হচ্ছে, পরীক্ষা তার চেয়ে কম হচ্ছে।
ডা. লেলিন চৌধুরী বলেন, ‘করোনা মোকাবিলায় দ্রুত পরিকল্পনা করে প্রধানমন্ত্রীর কৌশল অনুযায়ী কাজ করতে হবে।’
প্রধনামন্ত্রীর ৫ কৌশলের বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করছেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য লেফটেনেন্ট (অব.) কর্নেল ফারুক খান। তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর কৌশল অনুযায়ী কাজ করতে পারলে করোনা মোকাবিলায় আমরা জয়ী হবো।’
কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম মনে করেন, ‘৫ কৌশল বাস্তবায়নে সরকারকে আরও বেশি সংবেদনশীল হতে হবে।’ তিনি বলেন, ‘একই সঙ্গে যেসব জায়গায় ঘাটতি রয়ছে, সেগুলোর দিকেও নজর দিতে হবে।’ এজন্য সবার সঙ্গে পরামর্শ করে কৌশলগুলো বাস্তবায়নের পরামর্শ দেন তিনি।