আজ শুক্রবার, ২৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১৫ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

করোনাভাইরাস: ইসলাম যা করতে নির্দেশ দিয়েছে

সিলেটের বার্তা ডেস্ক
প্রকাশিত মার্চ ২০, ২০২০, ০৫:০৮ অপরাহ্ণ
করোনাভাইরাস: ইসলাম যা করতে নির্দেশ দিয়েছে
শেয়ার করুন/Share it

ধর্মবার্তা::বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে আলোচিত রোগের নাম ‘করোনাভাইরাস’। চীনের উহান শহরে এই ভাইরাসটি প্রথমে ছড়িয়েছে। তারপর একেএকে বিশ্বের অনেকগুলো দেশে তা ছড়িয়ে পড়েছে।
ভাইরাসটি নাকি ‘বাদূর’ এর স্যুপ থেকে প্রথমে ছড়ায়। যা ইউটিউব বা বিশ্ব সার্চ ইঞ্জিন গুগলের মাধ্যমে জানা যায়।
বর্তমানে এই ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা নির্দিষ্ট করে বলা দায়। তবে গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী লাখের উপর হবে।
আসা যাক, মূল আলোচনায়, বিশ্বের বড় বড় জ্ঞানী-বিজ্ঞানীরা যখন পুরোদমে তাদের মূল্যবান সময় ব্যয় করে করোনাভাইরাস থেকে বাঁচার উপায়-উপকরণ খোঁজছেন। তাদের আবিস্কৃত ভ্যাকসিন রোগীর উপর অ্যাপ্লাই করছেন।
কেউ কেউ মুখে মাস্ক পরার নির্দেশনা দিচ্ছেন। ঠিক সেই মূহুর্তে মনে পড়লো এই দুরারোগ্য, দূরাবস্থা, কঠিন সময়ে সত্য ও ন্যায় ও শান্তির ধর্ম ইসলাম কী বলছে?
এসময়ে কী করার নির্দেশনা দেয় ইসলাম। এটাই আজ মূল আলোচনার বিষয়।

মহানবী হযরত মুহাম্মদ সা. বলেছেন, ‘যখন কোনো জাতির মধ্যে প্রকাশ্যে অশ্লীলতা ছড়িয়ে পড়ে তখন সেখানে মহামারি আকারে প্লেগ রোগের প্রাদুর্ভাব হয়। তা ছাড়া এমন সব ব্যাধির উদ্ভব হয়, যা আগের লোকদের মধ্যে কখনো দেখা যায়নি। (ইবনে মাজাহ, ৪০১৯)

দুনিয়ার যাবতীয় বিপদাপদ, অসুখ বিসুখ আল্লাহর অনুমতিতেই হয়। মানুষ চক্রান্ত করুক, আর যাই করুক, জগতের সবকিছু আল্লাহর অনুমতিতে ঘটে। এভাবে আল্লাহ্ তাআলা কাউকে পরীক্ষা করেন, কাউকে আযাব দেন। মহামারি তেমনই একটি বিষয়। সম্প্রতি দেখা দেয়া করোনা ভাইরাস, এটিও একটি মহামারি বিষয়ে পরিণত হয়েছে। প্রশ্ন হচ্ছে কেন আল্লাহ্ তাআলা মহামারি দ্বারা শাস্তি দেন?
.
(১) দ্বীনের ব্যাপারে উদাসীনতা
কোনো জাতির মাঝে আল্লাহর অবাধ্যতা বেড়ে গেলে, অবাধে সবাই পাপাচারে লিপ্ত হলে আল্লাহ্ নানানভাবে শাস্তি তাদের দেন। ভূমিকম্প, ঝড় তুফান, জলোচ্ছ্বাস, মহামারি ইত্যাদি। অশ্লীলতা, জঘন্য পাপ বেড়ে যাওয়া ইত্যাদি কারণে এই আযাবগুলো আসে। অতীতেও পাপাচারের শাস্তি হিসেবে মহামারি প্রাদুর্ভাব ঘটেছে। এমন ঘটনা দাউদ আ.-এর সময়েই ঘটেছিল। আল্লাহ্ বলেন, ‘তুমি কি তাদের দেখনি যারা মৃত্যুভয়ে হাজারে হাজারে স্বীয় আবাসভূমি ত্যাগ করেছিল। অতঃপর আল্লাহ তাদের বলেছিলেন, তোমাদের মৃত্যু হোক। তারপর আল্লাহ তাদের জীবিত করেন। …থ (সুরা বাকারা, ২: ২৪৩)

আরও পড়ুন:  সিলেটে খুলেনি ৩৪ কিন্ডারগার্টেন: ফিরে গেল শিক্ষার্থীরা

আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. বলেন, ‘তারা সংখ্যায় ছিল চার হাজার। মহামারির ভয়ে তারা পালিয়ে ছিল। তারা বলেছিল, আমরা এমন ভূমিতে যাব যেখানে মৃত্যু নেই। অতঃপর তারা এক স্থানে একত্র হলো। তখন আল্লাহ তাদের ওপর মৃত্যুর ফরমান জারি করেন।থ (তাফসির ইবনে কাসির)

(২) দায়িত্ব পালনেও অবহেলা
যখন কোনো জাতির ওপর আযাব আসে, তখন শুধু পাপীরাই এতে আক্রান্ত হয় না। বরং মহামারি শুরু হলে নেক বান্দারাও আক্রান্ত হয়। দ্বীনি দায়িত্ব পালনে অবহেলা করা, নেক কাজের আদেশ এবং অসৎ কাজে বাঁধা প্রদান করা ছেড়ে দেয়ার কারণে এই আযাব আসে।

মহান আল্লাহ্ তাআলা বলেন, ‘অতএব তোমাদের পূর্বের প্রজন্মসমূহের মধ্যে এমন প্রজ্ঞাবান কেন হয়নি, যারা জমিনে ফাসাদ করা থেকে নিষেধ করত? এমন লোক কমই ছিল, তাদের আমি বাঁচিয়ে নিয়েছিলাম। যালিমরা বিলাসিতার পেছনে পড়ে ছিল এবং তারা ছিল অপরাধী।থ (সুরা হুদ, ১১: ১১৬)

মহামারি দেখা দিলে করণীয় কী?
(১) বেশি বেশি ইস্তিগফার করুন, তাওবা করুন।
আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আর আমি তোমাদের পূর্বেকার জাতিসমূহের কাছে বহু রাসূল পাঠিয়েছি। অতঃপর (রাসূলগণকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করার কারণে) তাদেরকে অভাব-অনটন ও রোগ-শোক দ্বারা পাকড়াও করেছি, যাতে তারা বিনীত হয়।থ (সুর আনআম, ৬: ৪২)

কাজেই যেকোনো বিপদে বান্দা আল্লাহ-মুখী হবে। তাঁর কাছে ক্ষমা চাইবে, আশ্রয় প্রার্থনা করবে। আমার রব এটাই চান। তাই মহামারি দেখা দিলে মুমিনের প্রধান কাজ হলো নিজের ভুল ত্রুটির জন্য আল্লাহর কাছে বিনীত হয়ে ক্ষমা প্রার্থনা করা, পাপ থেকে ফিরে আসা।

(২) নিজ এলাকায় থাকুন:
বেশির ভাগ মহামারিই সংক্রামক। তাই নবীজি সা. বলেছেন, ‘কোথাও মহামারি দেখা দিলে এবং সেখানে তোমরা অবস্থান করলে সে জায়গা থেকে বের হয়ে যেয়ো না। তদ্রূপ অন্য কোনো এলাকায় মহামারি দেখা দিলে, আর সেখানে তোমরা অবস্থান না করলে সেখানে যেয়ো না।থ (তিরমিযী, ১০৬৫)
অর্থাৎ মহামারিতে আক্রান্ত এলাকার মানুষ সেখানে অবস্থান করবে, বের হবে না। আর বাহিরের মানুষ সেখানে প্রবেশ করবে না। প্রত্যেকেই আপন আপন ভূমিতে থাকবে। যদি কেউ এতে আক্রান্ত হয়ে মারা যায়, তা হলে এর প্রতিদান কী?

আরও পড়ুন:  ইতালিতে বাড়ছে লাশের মিছিল, আরও ৭৯৩জনের মৃত্যু

নবী সা. বলেছেন, ‘অতএব প্লেগ রোগে কোনো বান্দা যদি ধৈর্য ধরে এবং এ বিশ্বাস নিয়ে আপন শহরে অবস্থান করতে থাকে যে, আল্লাহ তার জন্য যা নির্দিষ্ট করে রেখেছেন তা ছাড়া আর কোনো বিপদ তার ওপর আসবে না; তাহলে সেই বান্দার জন্য থাকবে শহীদের সাওয়াবের সমান সাওয়াব।থ (সহিহ বুখারী, ৫৭৩৪)

(৩) পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকুন:
পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকা ঈমানের অঙ্গ। আল্লাহর রাসূল সা. বলেছেন
‘পবিত্র ঈমানের অংশ।’ (মিশকাত শরীফ)

হাত সর্বদা পরিষ্কার রাখুন। বাহিরে বের হলে মুখে বা নাকে হাত দেবেন না। বাসায় ফিরে হাত ধৌত করে খাবার স্পর্শ করবেন। রাস্তার পশু-পাখি ধরা থেকে বিরত থাকুন।
.
(৪) মুখ ঢেকে হাঁচি দিন:
আল্লাহর রাসূল যখন হাঁচি দিতেন, হাত দিয়ে অথবা এক টুকরো কাপড় দিয়ে মুখ চেপে ধরতেন। (তিরমিযী)

এই ছোট্ট কাজটি যদি আমরা সচেতন-ভাবে পালন করি, তাহলে ধ্বংসাত্মক অনেক সংক্রামক ভাইরাসই প্রতিহত করা সম্ভব বিইজনিল্লাহ্।

(৫) বেশি বেশি দুআ পড়ুন:
হাদিসে এসেছে, যে ব্যক্তি নি¤েœাক্ত দুআটি সন্ধ্যায় তিনবার পাঠ করবে সকাল হওয়া পর্যন্ত তার প্রতি কোনো বিপদ হঠাৎ চলে আসবে না। আর যে তা সকালে তিনবার পাঠ করবে সন্ধ্যা পর্যন্ত তার ওপর কোনো হঠাৎ বিপদ আসবে না।
দুআটি হলো, অর্থ: আল্লাহর নামে, যার নামের বরকতে আসমান ও জমিনের কোনো বস্তুই ক্ষতি করতে পারে না, তিনি সর্বশ্রোতা ও মহাজ্ঞানী। (আবু দাউদ, ৫০৮৮)

এছাড়া নবীজি সা. পড়তেন, ‘আল্লাহুম্মা ইন্নি আ’উযুবিকা মিনাল বারাসি, ওয়াল জুনুনি, ওয়াল জুযামি, ওয়া সায়্যিইল আছক্বামি’

অর্থ: ‘হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে আশ্রয় চাই শ্বেত, উন্মাদনা, কুষ্ঠ এবং সব দুরারোগ্য ব্যাধি হতে।থ (আবু দাউদ, ১৫৫৪, সহীহ)

আল্লাহ্ তাআলা প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশসহ বিশ্বের সবাইকে কঠিন এই সময়ে হেফাজতে রাখুন। আমিন।।

সিলেটের বার্তা ডেস্ক


শেয়ার করুন/Share it
শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
 
১০১১১২১৩১৪১৫
১৬১৭১৮১৯২০২১২২
২৩২৪২৫২৬২৭২৮২৯
৩০৩১