আজ শুক্রবার, ১৯শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৬ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

করোনা: আগামী ২১দিন বেশী বিপজ্জনক

সিলেটের বার্তা ডেস্ক
প্রকাশিত মার্চ ২১, ২০২০, ১২:৪১ পূর্বাহ্ণ
করোনা: আগামী ২১দিন বেশী বিপজ্জনক
শেয়ার করুন/Share it

সিলেটের বার্তা ডেস্ক:: মহামারী রূপ নেওয়া করোনাভাইরাস আগামী ২১দিন দেশের জন্য সবচেয়ে বেশী বিপজ্জনক হয়ে দেখা দিতে পারে।

গবেষণা এমনটাই বার্তা দিচ্ছে।

এখন থেকে আগামী দুই থেকে তিন সপ্তাহ দেশের জন্য সবচেয়ে বিপজ্জনক সময়। এর মধ্যেই দেশের বিভিন্ন স্থানে সামাজিকভাবে নতুন করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার শঙ্কা আছে। গতকাল পর্যন্ত যারা আক্রান্ত দেশ থেকে এসেছেন তাদের কাছ থেকে ছড়ালেও সর্বোচ্চ আগামী ২১ দিনের মধ্যেই তা প্রকাশ পাবে।

ভাইরোলজির ভাষায় যাকে ‘পিক টাইম’ বলা হয়। এ সময় সংক্রমিত হতে পারে অসংখ্য মানুষ। সামগ্রিক পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে এমন আশঙ্কা করছেন দেশের ভাইরোলজি বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, যেসব দেশে ভাইরাসটি সামাজিকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে সেই দেশগুলো থেকে আসা যাত্রীদের বাধ্যতামূলক কোয়ারেন্টিনে রাখা হলে এ ধরনের পরিস্থিতির সৃষ্টি হতো না। তবে এখনও যদি ছড়িয়ে পড়া দেশ থেকে আসা যাত্রীদের বাধ্যতামূলক কোয়ারেন্টিনে আনা হয় তবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ সম্ভব।

বিশেষজ্ঞদের মতে, উচ্চ আয়ের উন্নত প্রযুক্তির রাষ্ট্রগুলো সব সুযোগ-সুবিধা থাকার পরও নতুন করোনাভাইরাসে মহামারী ঠেকাতে চরমভাবে ব্যর্থ হয়েছে। এই ব্যর্থতার মূল কারণ, ওই দেশগুলোর নীতিনির্ধারকরা প্রকৃত পরিস্থিতি অনুধাবন করতে ব্যর্থ হয়েছে। তারা সময়ের কাজ সময়ে করতে পারেনি। এসব দেশের প্রতিটিতেই ভাইরাসের সংক্রমণ শুরু হয়েছিল আক্রান্ত দেশ থেকে আসা দু-একজন ব্যক্তির মাধ্যমে।

ভাইরোলজির দৃষ্টিকোণ থেকে পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, যেসব দেশে ভাইরাসটির ব্যাপক সংক্রমণ ঘটেছে সেসব দেশে প্রথম ২ থেকে ৩ সপ্তাহ হাতেগোনা কয়েকজনের দেহে এটি শনাক্ত হয়।

একটা পর্যায়ে সেই সংখ্যা আশঙ্কাজনকভাবে বাড়তে থাকে। এর কারণ, প্রথমে দেশে প্রবেশ করা সেই দু-একজন ব্যক্তি তাদের পরিবার থেকে শুরু করে যত মানুষের সংস্পর্শে গিয়েছেন, তাদের অনেকের দেহেই ভাইরাসের সংক্রমিত হয়েছে। এই ভাইরাস সংক্রমণের লক্ষণগুলো প্রকাশ হতে সাধারণত ১ থেকে ২ সপ্তাহ সময় প্রয়োজন হয়। তাছাড়া সাধারণ সর্দি-কাশি বা ফ্লুর সঙ্গে এর উপসর্গগুলোর মিল থাকায় পরীক্ষা না করে, শুধু শারীরিক লক্ষণ দেখে এটি আলাদা করা সম্ভব হয় না।

আরও পড়ুন:  যে কারণে এলজিআরডি মন্ত্রীকে নিয়ে সিলেট আসছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী

এ প্রসঙ্গে প্রখ্যাত ভাইরোলজিস্ট এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম যুগান্তরকে বলেন, আগামী দুই থেকে তিন সপ্তাহ বাংলাদেশের জন্য বিপজ্জনক সময়। আমাদের হিসাব মতে, এই সময়ে দেশে নতুন করোনাভাইরাসের পিক হবে। যা হওয়ার এই সময়ে হয়ে যাবে। তিনি বলেন, যেসব সতর্কতা এখন নেয়া হচ্ছে এগুলো আরও আগেই নেয়া দরকার ছিল। পিক হলে আরেকটি ডিজাস্টার ঘটবে।

সেটা চিকিৎসক ও সেবাদানকারীদের ক্ষেত্রে। কারণ তাদের হাতে পর্যাপ্ত পার্সনাল প্রটেকশন ইকুইপমেন্ট (পিপিই) নেই। ফলে যারা চিকিৎসা ও সেবা দেবেন তারা ব্যাপকভাবে ভাইরাসটি দ্বারা সংক্রমিত হতে পারেন। অধ্যাপক নজরুল বলেন, আমরা এ ধরনের ঝুঁকি থেকে অনেকাংশই নিরাপদে থাকতে পারতাম যদি সামাজিকভাবে ছড়িয়ে পড়া দেশগুলো থেকে আসা যাত্রীদের বাধ্যতামূলক কোয়ারেন্টিনে নিতে পারতাম। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে প্রভাবশালীদের জন্য সেটি নিশ্চিত করা সম্ভব হয়নি।

দেশে পরিস্থিতি বিশ্লেষণে দেখা গেছে, বাংলাদেশে কোভিড-১৯ এর প্রথম রোগী শনাক্ত হয় ৮ মার্চ। বর্তমানে সেই সংখ্যা ২০ জন, যাদের মধ্যে মৃত্যু হয়েছে ১ জনের। অর্থাৎ ইতালি থেকে আসা ১৪২ জনকে হোম কোয়ারেন্টিনে পাঠিয়ে দেয়ার কয়েকদিনের মধ্যেই দেশের প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হয়। এখন পর্যন্ত যে ২০ জন রোগী শনাক্ত হয়েছে তাদের সবাই কোভিড-১৯ এর মহামারী আক্রান্ত দেশ থেকে আসা বা তাদের পরিবারের সদস্য। অথচ শুরুতেই ঝুঁকিপূর্ণ দেশ থেকে আসা যাত্রীদের প্রাতিষ্ঠানিকভাবে কোয়ারেন্টিনে রাখলে দেশ মহামারীর হুমকিতে পড়ত না।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্যে দেখা গেছে, গত দুই মাসে সমুদ্র, সড়ক ও আকাশপথে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছেন ৬ লাখ ৪৫ হাজার ৭৪২ জন। যাদের বেশির ভাগই কোভিড-১৯ এর মহামারী চলছে, এমন দেশ থেকে এসেছেন। সতর্কতার জন্য দেশের প্রবেশপথগুলোতে এসব যাত্রীর স্ক্রিনিং করা হয়। তবে সংক্রমণের লক্ষণ প্রকাশ পেতে এক থেকে দুই সপ্তাহ সময় লাগায় স্ক্রিনিংয়ের মাধ্যমে যাত্রীদের মধ্যে কেউ যে ভাইরাসটির বাহক তা নিশ্চিত করা সম্ভব হয়নি। ফলে বাহকরা দেশে ফিরে বিভিন্ন মানুষের সংস্পর্শে এসে নিজের অজান্তেই ভাইরাসটি ছড়িয়ে দিচ্ছেন।

আরও পড়ুন:  ডিসেম্বরে রিজার্ভে যুক্ত হবে ১.৩১ বিলিয়ন ডলার

বর্তমান পরিস্থিতিতে সম্ভাব্য কোভিড-১৯ এর মহামারী প্রতিরোধ করার কাজটি দুরূহ হয়ে গেলেও অসম্ভব নয়। তবে এর দায়িত্ব নিতে হবে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে। একটি অধিদফতর বা মন্ত্রণালয়ের পক্ষে এ ধরনের বৈশ্বিক মহামারী (প্যানডেমিক) প্রতিরোধ করা সম্ভব নয়। এর জন্য দরকার প্রতিটি মন্ত্রণালয়ের সমন্বিত উদ্যোগ। পাশাপাশি সাধারণ জনগণের সচেতনতা, বেসরকারি খাতের শীর্ষ পর্যায়ের সক্রিয় সহযোগিতা। এই তিন ধরনের মানুষদের সমন্বয় না হলে এ ধরনের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ অসম্ভব হয়ে পড়বে।

এ প্রসঙ্গে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজের ভাইরোলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. জাহিদুর রহমান যুগান্তরকে বলেন, দেশের সম্ভাব্য মহামারী প্রতিরোধে অবিলম্বে প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে কোভিড-১৯ এর একটি জাতীয় রেসপন্স টিম গঠন করতে হবে। যার প্রতিটি কার্যক্রম প্রধানমন্ত্রী কার্যালয় থেকে সরাসরি পরিচালিত হবে। জাতীয় রেসপন্স টিমে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে কর্মরত বিশেষজ্ঞদের নীতিনির্ধারক পর্যায়ে সম্পৃক্ত করে স্বাধীনভাবে মতামত প্রদানের সুযোগ দিতে হবে। সারা দেশে হোম কোয়ারেন্টিনে থাকা সব ব্যক্তিকে বাধ্যতামূলকভাবে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে নিতে হবে।

জেলা পর্যায়ে বিভিন্ন আবাসিক হোটেল ভাড়া নিয়ে সেগুলোকে সাময়িক কোয়ারেন্টিন সেন্টারে পরিণত করতে হবে। প্রয়োজনে শৃঙ্খলা নিশ্চিতে সর্বস্তরে সেনাবাহিনীকে সম্পৃক্ত করতে হবে। যেসব সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসক, নার্স, টেকনিশিয়ানদের জন্য এখনও পিপিই (পারসন্যাল প্রটেকশন ইকুইপমেন্ট) পাঠানো হয়নি, সেখানে দ্রুত সরবরাহ করতে হবে। কোভিড-১৯ নিয়ে ফেসবুক, টুইটার, ইউটিউবসহ সব ধরনের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের গুজব প্রতিহতে নজরদারি বাড়াতে হবে। প্রয়োজনে আইনগত ব্যবস্থা নিতে হবে।

 

সিলেটের বার্তা ডেস্ক


শেয়ার করুন/Share it
শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
 
১০১১১২
১৩১৪১৫১৬১৭১৮১৯
২০২১২২২৩২৪২৫২৬
২৭২৮২৯৩০