আজ শুক্রবার, ২৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১৫ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

করোনার উপসর্গ: মৃতের সংখা বাড়ছে মৌলভীবাজারে

সিলেটের বার্তা ডেস্ক
প্রকাশিত এপ্রিল ১০, ২০২০, ০৩:২৫ অপরাহ্ণ
করোনার উপসর্গ: মৃতের সংখা বাড়ছে মৌলভীবাজারে
শেয়ার করুন/Share it

সিলেটের বার্তা ডেস্ক:: প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের উপসর্গ নিয়ে মারা যাওয়ার সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে মৌলভীবাজারে।

গত ৪ এপ্রিল করোনার উপসর্গ নিয়ে একজনের মৃত্যুর পর তার নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা করলে তার শরীরে কভিড ৯০ পজিটিভ পাওয়া যায়।

এদিকে গত ৮ এপ্রিল এক শিশু মারা যাওয়ার পর তার মায়ের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে।

এতে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে জেলার সাধারন মানুষসহ চাশ্রমিক জনগোষ্ঠি।

এদিকে ঢাকা থেকে সীমান্তবর্তী ইসলামপুর ইউনিয়নে প্রতিদিন ঢাকায় কর্মরত লোকজন আসছেন। চা বাগানে ঢাকা ফেরৎ একজনের শরীরে জ্বর সর্দি দেখা দিলে স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মীরা নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য প্রেরন করেন। এতে করে জেলার ৯২ টি চা বাগানে করোনা আতংক বিরাজ করছে। প্রশাসন চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে সবাইকে ঘরে রাখতে, তারপরও গ্রাম এলাকার বাজার ও দোকানে ভিড় করছেন মানুষ। চা শ্রমিক নেতারা হুশিয়ারী দিয়ে বলেন ১১ এপ্রিলের মধ্যে তাদের দাবী না মানলে তারা ঘরে বসে থাকবেন না।
সারা বিশ্বের মতো করোনা আক্রান্ত হয়েছে বাংলাদেশও। বাদ যায়নি প্রবাসী অধ্যুষিত ও চায়ের রাজধানীখ্যাত মৌলভীবাজার জেলাও। গত ৪ এপ্রিল করোনার উপসর্গ নিয়ে রাজনগর উপজেলার টেংরা ইউনিয়নের আকুয়া গ্রামের এক টং দোকানদার মারা যাবার পর তার সংগ্রহ করা নমুনায় করোনা কোভিড ১৯ ধরা পড়ার মধ্য দিয়ে জেলায় করোনাতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। পরবর্তীতে ৮ এপ্রিল কমলগঞ্জ উপজেলার রহিমপুর ইউনিয়নের ১৩ বছর বয়সি এক শিশু করোনার উপসর্গ নিয়ে মারা যায়। মৃত শিশু ও তার মায়ের নমুনা সংগ্রহ করে পাঠানো হয়েছে পরীক্ষাগারে। রিপোর্ট আসলে বুঝা যাবে করোনা আক্রান্ত কিনা। এনিয়ে জেলায় আতংক বিরাজ করছে। এরইমধ্যে করোনা মোকাবিলায় সরকারের পক্ষ থেকে নেয়া হয়েছে নানা পদক্ষেপ। সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে দেয়া হয়েছে সাধারণ ছুটি। কিন্তু ছুটি নেই দেশের অন্য সব চা বাগানের শ্রমিকদের মতো মৌলভীবাজারের ৯২ টি চা বাগানের চা শ্রমিকদেরও।
করোনা সংক্রামণ ঠেকাতে প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে না যাওয়ার নির্দেশনা থাকলেও জেলার বিভিন্ন উপজেলায় চলছে মানুষের অবাধে চলাফেরা। কোনও জায়গায় রাতেও কাঠ চিরাইয়ের স’মিল চালানোর অভিযোগ পাওয়া গেছে। জেলার সবগুলো চা বাগানগুলোয় ঘাম ঝরাচ্ছেন চা শ্রমিকরা। এতে তারা রয়েছেন করোনা ঝুঁকিতে। স্বেচ্ছায় গৃহবাসে যাওয়ার ইচ্ছা থাকলেও বেতন কাটার ভয়ে অনেকেই কাজ করে যাচ্ছেন। ইতিমেধ্য চা শ্রমিক ইউনিয়নের নির্বাচিত ও পরাজিত প্যানেল মিলে ৭ এপ্রিল সভা ডেকে ১১ এপ্রিল সকল বাগানে পঞ্চায়েতের পক্ষ থেকে সঠিক দূরত্ব বজায় রেখে পালণ করা হবে মানব বন্ধন। তারপরও তাদের দাবী মানা না হলে ঘরে বসে থাকবেন না বলে হুশিযারী দিয়েছেন চা শ্রমিক নেতা।
এদিকে ঢাকাসহ দেশের অন্যান্য এলাকায় কাজ করতে যাওয়া বাগানের শ্রমিকরা এলাকায় ফিরলে তাদের মধ্যে রোগের লক্ষন দেখা দিলে চলছে আতঙ্ক। ইতিমধ্যে নারায়নগঞ্জ থেকে চম্পারায় চা বাগানের এক শ্রমিকের নমুনা পরীক্ষার জন্য আইডিসিআর এ পাঠানো হয়েছে। প্রতিদিনই বাহির থেকে ছেলে-মেয়রা বাড়ি ফিরছে।
শ্রমিক নেতারা বলছেন, একজন শ্রমিক আক্রান্ত হলে তা ছড়িয়ে পড়বে হাজারো শ্রমিকের মাঝে। এজন্য মজুরিসহ সাধারণ ছুটি ঘোষণাসহ সরকারি বরাদ্দের দাবি তাদের।
এপর্যন্ত জেলায় হোমকোয়ারেন্টিন এ রয়েছেন ৮৯২ জন, হোম কোয়ারেন্টিন থেকে ছাড় পেয়েছেন ৬৫৪ জন, প্রাতিষ্ঠানিক কোরেন্টিন এ আছেন ১ জন এবং ১৩৬ জনের নমুনা সংগ্রহ করে রিপোর্টের জন্য আইইডিসিআর এ পাঠানো হয়েছে। রিপোর্ট এসেছে ১৭ জনের তার মধ্যে শুধু রানগরে মৃত ব্যক্থির নমুনায় পজেটিভ এসেছে।
চা শ্রমিকরা বলেন বাগান বন্ধ করে দিলে তারা কি খাবেন। তবে তারা আতংকে আছেন জানিয়ে বলেন, অচিরেই বেতন ভাতা দিয়ে যেন তাদের ছুটি মঞ্জুর করা হয়। তারাও বাঁচতে চান।
মহেশ রজত, স্বাস্থ্য কর্মী, ৩নং ওয়ার্ড, ইসলামপুর বলেন, খবর পেয়ে তিনি ঢাকা বা নারায়ন ফেরৎদের নাম তালিকা করে উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তাকে জানাচ্ছেন, তিনিউ চুড়ান্ত ব্যবস্থা গ্রহন করবেন।
রাজেশ নুনিয়া, ইউপি সদস্য, ইসলামপুর ( চম্পারায় চা বাগান) বলেন, নারায়নগঞ্জ থেকে আসা সুমন ওরফে ডিপজল ব্যানার্জী৪/৫ দিন থেকে জ্বর ও কাশিতে ভুগছে। তার নিজ বাড়িতে থাকতে বলা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, তারা বহিরাগত লোকদের বাগানে ঢুকতে দিচ্ছেন না। তাদের ঘন বসতির মধ্যে করোনা সংক্রমন হলে বাগানে মহামারি দেখা দিবে, তখন আর কেহ বাচঁবেনা। এসমস্যা থেকে উত্তোরন চান তারা।
ডা. মুহম্মদ মাহবুবুল আলম ভুঁইয়া, উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা, কমলগঞ্জ বলেন, ৮ এপ্রিল কালেঙ্গায় একটি শিশু মারা গেলে তার ও তার মায়ের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে। তবে তিনি বলেন, শিশুটি আগে থেকেই নিউমোনিয়া আক্রান্ত ছিল। চম্পারায় চা বাগান থেকে নারায়নগঞ্জ ফেরৎ ছেলেটির নমুনা সংগ্রহ করে তাকে হোম কোয়ারেন্টিনে থাকার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
রামভজন কৈরী, সাধারণ স¤পাদক, বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়ন বলেন, রপ্তানীমুখি সকল শিল্প প্রতিষ্টানসহ সরকারী প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হলেও বন্ধ করা হয়নি অবহেলিত চা জনগোষ্ঠি বসবাসরত এলাকা চা বাগানগুলো। দেশের সবক’টি চা বাগানে প্রায় দেড় লক্ষাধিক চা শ্রমিক কাজ করে যাচ্ছে। চা বাগানে গাদাগাদি করে বসবাস করলেও বাগান মালিক বা সরকার বাগান বন্ধে কোনও প্রদক্ষেপ গ্রহন করেনি। তিনি বলেন, গত ৭ এপ্রিল চা শ্রমিক ইউনিয়নের দু’পক্ষের নেতৃবৃন্দকে নিয়ে সভা হয়েছে। আগামীকাল ১১ এপ্রিল সারাদেশে প্রতিটি চা বাগানে পঞ্চায়েত কমিটি ও মূল কমিটি মিলে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে মানব বন্ধন করবে। যদি তাদের দাবী মানা না হয় তবে তারা ঘরে বসে না থেকে কঠোর আন্দোলনে যেতে বাধ্য হবেন। তিনি বলেন, সরকার ঘোষিত প্রনোদনা প্যাকেজের আওতায় যেন চা শ্রমিকদেরও নিয়ে আসা হয়।
করোনা সংক্রামণ এড়াতে সরকারি সুবিধা নিশ্চিত করে দ্রুত সাধারণ ছুটি ঘোষণার দাবি মৌলভীবাজার জেলাসহ দেশের সকল চা শ্রমিকদের।
জেলার সর্বত্র ত্রাণ নিয়েও জনপ্রতিনিধিরা সাধারন ও খেটে খাওয়া মানুষের ত্রাণ নিয়ে নিজের খেয়াল খুশি মত আচরন করছে, এদিকে সরকারের কঠোর নজরদারী প্রয়োজন বলে জানান সাধারন ও খেটে খাওয়া মানুষ।

আরও পড়ুন:  স্বতন্ত্র প্রার্থীদের দল থেকে বহিষ্কার করবে না আওয়ামী লীগ
সিলেটের বার্তা ডেস্ক


শেয়ার করুন/Share it
শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
 
১০১১১২১৩১৪১৫
১৬১৭১৮১৯২০২১২২
২৩২৪২৫২৬২৭২৮২৯
৩০৩১