সিলেটের সীমান্তবর্তী এলাকা গোয়াইনঘাটে কামাল উদ্দিন হত্যার ১মাস অতিবাহিত হলেও এখনও ধরা ছোঁয়ার বাইরে মুল আসামীরা। তবে এই মামলাটি আটক সিআইডিতে হস্তান্তর করা হয়েছে।
আতঙ্ক আর অনিরাপত্তায় এতিম শিশুদের নিয়ে দিনাতিপাত করছেন নিহত কামালের বিধবা স্ত্রী।
তাকে মামলা তুলে নেওয়ার হুমকীও দিচ্ছে আসামীরা।
সরেজমিন ঘুরে জানা যায়, চলতি বছরের ২০ফেব্রুয়ারী নিহত কামাল উদ্দিন কুরিখলা গ্রামের আব্দুল্লাহ’র ছেলে দুলালের কাছে পাওনা টাকা চাইতে গিয়ে হামলার শিকার হন।
এই হামলায় কামাল ও তার ভাই আজির উদ্দিন গুরুতর আহত হন।
এঘটনায় কামাল উদ্দিন বাদী হয়ে মামলা দায়ের করলে গোয়াইনঘাট থানা পুলিশ তদন্ত করে ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত হয়ে মামলা এফআইআর করে এবং চার্জশীট আদালতে প্রেরণ করেন । গোয়াইনঘাট থানার মামলা নং (০২(০১-০২-২১)।
এই মামলার জের ধরে খুনিরা পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী ঈদুল ফিতরের দিন বাদ মাগরিব কামালের উপর অতর্কিত হামলা চালিয়ে হত্যা করে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, খুনিরা আবারও নিহত কামালের স্বজনদের এবং বাদী (ভাই) কে মামলা প্রত্যাহারের জন্য চাপ সৃষ্টি করছে, অন্যতায় বাদীকে উল্টো হামলার হুমকি দিচ্ছে।
উল্লেখ্য, গেল ঈদুল ফিতরের দিন মাগরিবের নামাজের পর গোয়াইনঘাট উপজেলার বঙ্গঁবীর পয়েন্টে প্রতি পক্ষের পরিকল্পিত হামলায় কামাল উদ্দিন (৫০) সন্ত্রাসী হামলায় নির্মম ভাবে খুন হন। নিহত কামাল কুরিখলা গ্রামের মৃত আব্দুল হাসিমের ছেলে। স্থানীয় একাধিক সূত্রে জানা যায়, ঈদুল ফিতরের দিন সন্ধ্যায় ৭টার দিকে সালুটিকর-গোয়াইনঘাট সড়কের বঙ্গবীর পয়েন্টে পূর্ব শত্রুতার জের ধরে কুরিখলা গ্রামের মৃত আব্দুল হাসিম ছেলে কামাল উদ্দিন (৫০) কে কুরিখলা গ্রামের আব্দুল্লাহ মিয়া, মস্তফা মিয়া,দুলাল মিয়া,আবুল হাসানাত, নাজিম কামরান , ইমরান আহমদ, শামীম আহমদ, গোলাম রব্বানী নীলু, ফারুক আহমদ কালা, আনোয়ার হোসেন, সাকের পেকের খাল গ্রামের কামাল, সুলেমান, রইছ আলী, ছয়ফুল, মাসুম, তোতা মিয়া, মাসুক, খালেদ, রাজিব, ২০/২৫ জন লোক পরিকল্পিত হামলা চালায়। হামলাকারীরা বঙ্গবীর পয়েন্টে চান মিয়ার দোকান থেকে কামাল উদ্দিনকে জোরপূর্বক ধরে এনে বিকটিম খালেদের দোকানের সামনে বরই গাছে বেঁধে দা, ক্রীস, রুইল, রট সুলফি দিয়ে অনবরত হামলা চালায়। পরে বুকের মধ্যে লাতি মেরে মাঠিতে ফেলে পেট এবং বুকে অনবরত লাতি মারতে থাকে। পরে গামছা পেছিয়ে টানা হেছড়া করে আপ্তাব উদ্দীনের দোকানের সামনে নিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করে।
খবর পেয়ে গোয়াইনঘাট থানার একদল পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে কামাল উদ্দিনকে উদ্ধার করে সিওমেক হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করে। ঘটনার দিন ঘটনাস্থল থেকে গোয়াইনঘাট থানা পুলিশ সন্দেহভাজন ৩ জনকে আটক করে এবং আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে প্রেরন করে। এদিকে নিহতের ভাই আব্দুল হামিদ বাদী হয়ে কুরিখলা গ্রামের মৃত ছাদ আলীর পুত্র মোঃ আব্দুল্লাহকে প্রধান আসামি করে আরও ১৮ জনের নাম উল্লেখ করে গোয়াইনঘাট থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলা নং (১২) তাং- ১৫-০৫-২০২১ইং।
জানতে চাইলে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সিআইডি পুলিশের এএসআই মিজানুর রহমান জানান ৩/৪ পুর্বে আমার হাতে তদন্তের দায়িত্ব আসছে। আমি তদন্ত শুরু করেছি, আসামীদের আটক করার জোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি এবং ইমিগ্রেশনে বার্তা দিয়ে রাখছি যেন আসামরা পালিয়ে বিদেশ যেতে না পারে।
নিহতের ভাই গিয়াস উদ্দিন জানান, আসামীরা মামলা প্রত্যাহার করার জন্য বিভিন্ন ভাবে চাপ প্রয়োগ করছে এবং আবারও হামলার হুমকি দিচ্ছে, তিনি আসামীদেরকে আটক করে শাস্তির দাবি জানান প্রসাশনের নিকট। নিহত কামালের বিধবা স্ত্রী রাবিয়া বার বার বিলাপ করে জানান আমি এখন এই এতিম সন্তানদের নিয়ে কেমনে বাঁচি, বাচ্চাদের কেমনে লালন পালন করি, খুনিরা আমার স্বামীর প্রান কেড়ে নিয়েছে, আমি খুনিদের সর্বোচ্চ শাস্তি ফাঁসি চাই।