আজ শুক্রবার, ১৯শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৬ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

পাগল সমাচার

সিলেটের বার্তা ডেস্ক
প্রকাশিত জুন ১৬, ২০২১, ০২:৩০ অপরাহ্ণ
পাগল সমাচার
শেয়ার করুন/Share it

‘পাগল ‘ বলতে আমরা সাদাচোখে যে-ধরণের লোককে, লোকের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যকে বুঝে থাকি, তা হলো- পাগলেরা বিড়-বিড় করে কী যেন বকতে থাকবে, কারোও-কারোও মাথার চুল থাকবে জট বাঁধা , কথা-বার্তা থাকবে অসংলগ্ন, অসহিষ্ণু।

কোনও-কোনও পাগল উলঙ্গপনাকে বীরত্বসহকারে প্রদর্শন ক ‘রে আনন্দ উপভোগ করে থাকে, কেউবা আবার গাছের মগডালে উঠে নীচের পথচারীর উপর প্রশ্রাব করে দিয়ে মজা পায়।এসব বৈশিষ্ট্যমন্ডিত পাগলকে আমরা মানসিক রোগি হিসেবেও চিহ্নিত করে থাকি।

সমাজে, পরিবারে এরা অবহেলিত, অপাঙতেয়, বঞ্চনার শিকার।কথা-বার্তায় অসংলগ্ন আচরণের জন্যই হয়তোবা লোকে বলে থাকে- ‘পাগলে কী না কয় ‘!

এ ধরণের পাগলদের পাগলামোকে সৃষ্টিকর্তা কর্তৃক প্রদত্ত অসুস্থতা হিসেবেই আমরা মেনে নিই।আবার এদের কারোও-কারোও পাগলমো মনুষ্যসৃষ্টও বটে, যা সমাজে অহরহ ঘটতে দেখা যায়।মনুষ্যসৃষ্ট এসব পাগলদের অনেককেই পাগলা-গারদে পাঠিয়ে দিয়ে এদের স্রষ্টারা কী যে সুখ পায়! ভাই ভাইয়ের কিংবা ভাই বোনের সম্পত্তির লোভ বা আত্মসাৎ-প্রবণতার কারণে একজন সুস্হ্য ভাই- বোনকে পাগলা-গারদে পাঠাতে কুন্ঠাবোধ করেনা! হেমায়েতপুরে গেলে এমন অনেক ‘সুস্হ্য- পাগল ‘ এর দেখা মেলে।তাদের – ‘আমি পাগল না।আমাকে পাগল বানিয়ে / সাজিয়ে পাগলা-গারদে রাখা হয়েছে।আমি বের হয়ে স্বাভাবিক জীবন-যাপন করতে চাই ‘- এমনতরো আর্তচিৎকারে আকাশ-বাতাস ভারী হয়ে উঠে।

এ তো গেলো ‘পাগল ‘ এর একটা দিক।এ ছাড়াও সমাজে আরোও কত ধরণের পাগল বা পাগলের পাগলামো নিত্য-নিয়ত আমাদের চোখে পড়ে এর হিসেব মিলাতে গেলে নিজেরই ‘পাগল ‘ হওয়া ছাড়া কোনও উপায় থাকবেনা।

এসব পাগল বা পাগলামোর কোনও-কোনওটির মাঝে আতিশয্য দৃশ্যমান হলেও এর পরশে মানুষ বেঁচে থাকার অবলম্বন খুঁজে পায়, প্রশান্তি অনুভব করে।আবার কোনও – কোনওটি দৃষ্টিকটুতো বটেই, এর মাধ্যমে সমাজে ভাঙ্গন, অস্হিতিশীলতা, প্রচলিত আইনকে অমান্যতার মহড়া প্রদর্শনের প্রতিযোগিতা চলতে থাকে।

যেমন-ভালোবাসার পাগলঃ এ পাগলামোটা একটি শিশু তার পিতা-মাতার মাঝে প্রত্যক্ষ বা অনুভব করে বেশি, যার মধ্যে প্রায় শতভাগেই কোনও কৃত্রিমতা থাকেনা।বিশেষ করে, একজন পিতা বাহির থেকে বা কর্মক্ষেত্র থেকে ফিরে তাঁর আদরের শিশুসন্তানটিকে বুকে টেনে নিয়ে স্নেহ-ভালোবাসায় সন্তানের মন ভরিয়ে দেয়, কিংবা- একটি শিশু সন্তান তার পিতার বা মাতার আদর-সোহাগ পাবার জন্য সর্বদাই উদগ্রিব, পাগলপারা থাকে।এই পাগলামো মানুষ, পশু-পাখী, জীব-জন্তু নির্বিশেষে সকল সৃষ্টিকুলের, প্রাণিকুলের মধ্যেই বিদ্যমান থাকে। এবং তা আছে বিধায়ই এর উপর ভর করেই পৃথিবী আজও ভালোবাসাপূর্ণ -ভারসাম্যতা ও বাসযোগ্যতা নিয়ে আমাদের চোখে ধরা দেয়।

আরও পড়ুন:  ইন্টারনেটে মাতৃভাষার ব্যবহার ও আমরা

প্রেম-পাগলঃ প্রেমের মাঝে এক ধরণের পাগলামো আছে বলেই লাইলি-মজনু, শিরি-ফরহাদ , চন্ডিদাস-রজকিনী, ছয়ফুল মুল্লুক- বদিউজ্জামান, গাজী কালু-চম্পাবতী, আলোমতি-প্রেমকুমার, বেদের মেয়ে জোসনা কিংবা এ-সবের মতো আরও অনেক উপাখ্যানের সাক্ষাত পাই আমরা।আবার সমাজ-সংসার-ত্যাগীও হয় কেউ-কেউ।এ পাগলামোতে আতিশয্যের কারণে কোনও-কোনও প্রেমিক বা প্রেমিকা যে-কোনওভাবে আত্মহত্যার মাঝে নিজের সুখ খুঁজে নিতে চেষ্টা করে, সহমরণেও শান্তির সন্ধান করে বেড়ায়।

সম্পদের পাগল- অর্থের পাগলঃ এ ধরণের পাগলেরা কীভাবে, বিশেষ করে অবৈধ উপায়ে সম্পদ আহরণ/ অর্জন করা যায় সেই ধান্ধায় সবসময় ‘পাগল ‘থাকে।এদের থাকে কিছু সংখ্যক গডফাদার।এই গডফাদারদের আশ্রয়ে- প্রশ্রয়েই এই সমাজে পাপলু, পাপিয়া, সম্রাটদের মতো ‘সম্পদের পাগল ‘দের উত্থান ঘটে, রংপুরের বালিশকান্ড, ফরিদপুরের পর্দাকান্ড এবং এই করোনাকালেও ঔষধসামগ্রী ক্রয়ে লুটতরাজের লঙ্কাকান্ড ঘটে।আর গডফাদাররা আমেরিকায় অট্টালিকা বানায়, কানাডায় বেগমপাড়া তৈরী করে!

ক্ষমতার-পাগলঃ ক্ষমতায় যাবার জন্যে পাগলামো করে কেউ-কেউ ভিন্ন চোরাই পথ খোঁজে।আবার কেউ-কেউ ক্ষমতা ধরে রাখার জন্য, ক্ষমতার পালা চিরস্হায়ী করার মানসে, নিরাপদ রাখার জন্য, টিকে থাকার জন্য প্রতিবেশীর সহযোগিতায় ক্রীড়নক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে দিনের ভোট রাতে নেয়ার মতো পাগলামো করতেও কুন্ঠাবোধ করেনা।প্রতিপক্ষকে কেটে টুকরো-টুকরো করে নদীতে ফেলে দেয়ার প্রমাণ মিলে যে সন্ত্রাসী-খুনির বিরুদ্ধে, নিজের/ পিতার ক্ষমতার দাপটে সেই খুনির জেলখানায় বিয়ের আয়োজন কিংবা জেলখানায় নারীসঙ্গ ভোগ এর মতো ঘৃন্যতম পাগলামো প্রদর্শনও জাতি প্রত্যক্ষ করে! ক্ষমতার দাপটে প্রতিপক্ষ/ সাংবাদিককে ফাঁসাতে থানায় বোমা হামলা চালানোর জন্য পরামর্শ দেয়ার মতো পাগলামো করতেও দেখা যায় উত্তরবঙ্গের কোনও এক জনপ্রতিনিধিকে।ছাত্রদের পিঠকে রাস্তা বানিয়ে এর উপর দিয়ে হেটে যাবার নেশা বা পাগলামো করতে দেখা যায় দক্ষিণের এক স্হানীয় জনপ্রতিনিধিকে। একেই বলে – ক্ষমতায়/ ক্ষমতার পাগলামি।’পাগল ‘কাকে বলে!

ভবের পাগলঃ আমরা সবাই-ই যেন ভবের( দুনিয়ার) পাগল।আমরা সবাই পরকালে বিশ্বাস করলেও অধিকাংশই এর হিসাব-নিকাশ সম্পর্কে সচেতন নই।কাকে মেরে কে, কখন, কত বড় হওয়া যায়- সেই পাগলামোতেই যেন সবাই অভ্যস্হ হয়ে গেছে।

আরও পড়ুন:  করোনাভাইরাস ও করুণ পরিস্থিতি

ভাবের পাগল-লাভের পাগলঃসমাজে এমন কিছু লোকের দেখা মেলে, যারা নিজেকে এমনভাবে প্রদর্শন/ উপস্হাপন করে যেনো তাঁরা দুনিয়ার লাভালাভ কিচ্ছুই বোঝেনা, বুঝতে চায়না।অনুসন্ধানী দৃষ্টিতে ওদের ভেতরের মানুষটাকে খুঁজে বের করলে স্পষ্ট হয়ে উঠবে, আসলেই ওরা ভাবের পাগল- লাভের পাগল ছাড়া অন্য কিছুই নহে।

বিয়ে-পাগলঃ এরা আজ এখানে তো কাল ওখানে ঘুরে ফিরে একেকটা বিৃযে করবে, আবার ক ‘দিন পর সেই সম্পর্ক ত্যাগ করে অন্য আরেকটা জুটিয়ে নিবে।বিয়েপাগলদের এটা যেনো এক ধরণের নেশা।এই বিয়েপাগলদের কেউ-কেউ বিয়েতে শতক হাঁকানোর জন্যও যেন প্রতিজ্ঞাবদ্ধই হয়ে থাকে।আজকাল কোনও-কোনও নারী বিয়েপাগলী যেন এ পাগলামোটাকে অর্থ উপার্জনের একটা মোক্ষম উপায় হিসেবেই বেছে নিয়েছে।

বউ-পাগলঃ এরা কাজকর্ম ফেলে রেখে বউয়ের আঁচল ধরে বসে থাকতেই যেন বেশি আনন্দ পায়।বউ যেটা বলে সেটা শিরোধার্য হিসেবেই মেনে নেয়াতেই এরা কৃতার্থবোধ করে।বউয়ের সকল মিথ্যাকে এরা বিনা বাক্য ব্যয়ে সত্য বলে মেনে নিতে পারলে খুশি হয়।বউয়ের কানকথায় এরা বৃদ্ধ পিতা-মাতাককে বাইরে ঠেলে দিতে কিংবা বৃদ্ধাশ্রমে ফেলে রেখে আসতেও কুন্ঠাবোধ করেনা।এরা সেরা স্ত্রৈন।’বউপাগল ‘কাকে বলে!

বাবার-পাগলঃ নিজের বাবাকে অমর্যাদা করে এরা বিভিন্ন মাজার, আখড়া, খানকা ‘র পীর বাবা, ন্যাঙটা বাবা, বদনা-বাবা, কল্লা-বাবা, খাজা-বাবা, ভান্ডারি-বাবার জন্য সর্বদা পাগল হয়ে থাকে।এসব বাবার পায়ে চুমু খেয়ে, সিজদা দিয়ে, বাবার মাজারে গাঁজা খেয়ে নেশাগ্রস্থ হয়ে নারী-পুরুষ একসাথে ঠেলা-ঠেলি, ঢলা-ঢলি, কুলাকুলি ক ‘রে বাবার নেক নযর প্রাপ্তির প্রত্যাশা করে জীবিত-মৃত বাবার আত্মিকে পরম শান্তির ফল্গুধারায় ভিজিয়ে রেখে চরম শান্তিতে পাগল ও মশগুল হয়ে থাকে।তাইতো বলতে শুনি- ‘বাবা তোমার দরবারে সব পাগলের খেলা ‘!

বাবা(ইয়াবা) ‘র পাগলঃ এই বাবা ‘র পাগলেরা বাবা( ইয়াবা) ‘র সান্যিধ্য লাভের জন্য কিংবা বাবা ‘র সান্যিধ্য লাভে ব্যর্থ নিজ বাবা-মা, স্ত্রী-সন্তানকে হত্যা করতেও কোনওরূপ কুন্ঠা, দ্বিধাবোধ করোনা।যেমনটি দ্বিধাবোধ করেনা বাবায়(ইয়াবায়) আসক্ত একজন আদরের সন্তানকে একজন বাবা-মা লাল দালানে ঢুকাতে।বাবায়(ইয়াবায়) পাগলের সংখ্যা দিন-দিন অাশঙ্কাজনক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে, সামাজিক-পারিবারিক বন্ধনকে কলুষিত করছে, যা খুবই উদ্বেগজনক!
এ বাবা ‘র প্রবেশপথ বন্ধে সংশ্লিটদের সততা-নির্ভর ভূমিকা নিয়েও প্রশ্নতো আছেই।

আরও পড়ুন:  আলম খান মুক্তি: শৈল্পিক এক যুবনেতার নাম

বন্ধু-পাগলঃ বন্ধুর জন্য নিজের জীবনের কষ্টার্জিত সম্পদ বিসর্জন দিতে, বন্ধুকে বিলিয়ে দিতে ‘পাগল ‘ যেমন এ সমাজে দেখা যায় – তেমনি, ঠুনকো কোনও অজুহাতে বন্ধুত্বের সম্পর্ক ছিন্ন করার কারণে প্রকৃতই পাগল/ অপ্রকৃতিস্থ হয়ে যাওয়ার উদাহরণও বিরল নয়।

আবার, কোনও ব্যক্তির শারিরীক সামর্থ, চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য, তাঁর সামাজিক-আর্থিক ইত্যাদি সঙ্গতি, অবস্থানের সাথে যায়না – এমন কোনও কাজ করতে গেলে আমরা বলে থাকি- ‘লোকটা পাগল নাকি ‘!
এত পাগলের ভিড়ে কেবলমাত্র ‘পাগল ‘ ছাড়া কোনও সুস্হ্য মস্তিষ্কের মানুষের পক্ষে স্বাভাবিকভাবে বেঁচে থাকা কষ্টসাধ্য বৈকি!

লেখক: অবসরপ্রাপ্ত সহকারি পোস্ট মাস্টার জেনারেল, সিলেট প্রধান ডাকঘর।

সিলেটের বার্তা ডেস্ক


শেয়ার করুন/Share it
শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
 
১০১১১২
১৩১৪১৫১৬১৭১৮১৯
২০২১২২২৩২৪২৫২৬
২৭২৮২৯৩০